ডিজিটাল যুগে “এরেঞ্জড ম্যারেজ” বনাম “লাভ ম্যারেজ”
বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের জুটি তৈরী হয় স্বর্গে । পৃথিবীতে সেভাবেই বিয়ে হয় । অনেকেই হয়তো প্রথমেই আশানুরূপ বৈবাহিক জীবন পান না, কিন্তু একটা না একটা সময় ঠিকই পেয়ে যান ।
এখন এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পারবারিক ভাবে বিবাহ তথা এরেঞ্জড ম্যারেজ চান আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করতে চান বা লাভ ম্যারেজ চান । এখন এই উভয় ধরণের মধ্যে কোনটা ভালো বা ভালো না এটা নিয়ে বিতর্ক চলবেই, তবে একটা জিনিস বলা যায় নিঃসন্দেহে যে, আপনার বা আমার জন্য যা ভালো, তা অন্য কারো জন্য ভালো নাও হতে পারে । একেকজন মানুষ একেকরকম, তাদের জীবনও একেকরকম । তাই সবার জন্য একই জিনিস উপযুক্ত হবেনা । আমাদের আজকের এই বিষয়ে লাভ ম্যারেজ আর এরেঞ্জড ম্যারেজ বিষয়ক বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে ।
“মা-বাবার পছন্দেই কি বিয়ে করবো?” যেমন হয় এরেঞ্জড ম্যারেজ…
পারিবারিকভাবে বিবাহ যেভাবে সম্পন্ন হয় – পাত্র বা পাত্রী উভয়ের জন্য, তাদের মা-বাবা অথবা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা তাদের নিজেদের চেনা-জানা আত্মীয়, প্রতিবেশী, অন্যান্যদের মাধ্যমে বা বিবাহের ওয়েবসাইট ও সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বিবেচনার জন্য সম্ভাব্য পাত্র বা পাত্রীর সন্ধান করেন । প্রথমে দুটি পরিবারের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয় আর তারপরে মেয়ে বা ছেলেটি তাদের মতো সাক্ষাৎ করে । তারা এভাবে কিছু সময় একে অপরকে জানার চেষ্টা করে । এবং তারপর আশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ।
এখন এর মধ্যে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, দুজন মানুষ যারা একে অপরকে একদমই চেনে না বা বুঝে না, তারা পুরোটা জীবন একসাথে কাটানোর সিদ্ধান্ত কয়েকদিনের মধ্যে কিভাবে নিয়ে ফেলে ? এখানে দুটি বেশ বড় বেপার কাজ করে ।
১. পরিবারের বুজুর্গ ব্যক্তিদের ওপর আস্থা
২. সম্ভাব্য কিছু মানুষের মধ্যে থেকে নিজের জীবন সঙ্গীকে বেছে নেয়া
সব কিছু মিলে, পারিবারিক ভাবে বিবাহ অনেকের জন্যই সুখময় জীবন নিয়ে আসে ।
এক্ষেত্রে যে সমস্যা গুলো হয়, তা হলো বোঝাপড়ার অভাব । অনেকেই নিজের সঙ্গীকে ঠিকমতো বুঝতে পারেন না । অনেক ক্ষেত্রেই আপস করতে হয় নিজের ইচ্ছার সাথে । এই সম্পর্কগুলোতে কোনো কোনো সময় বন্ধুত্বও থাকেনা, যা অনেকের জন্য কষ্টকর বটে ।
লাভ ম্যারেজ এর বহু দিক
সাধারণত পারিবারিকভাবে না হলেও লাভ ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে সকলেই দেখা যায় তাদের মা-বাবার ব্যবস্থা নাও করা হয়, তবে ভালোবাসা ও আশীর্বাদ কামনা করে, যা কিনা পারিবারিক ভালোবাসার বিবাহ বা লাভ-এরেঞ্জড ম্যারেজ বলা যায় । এটাই এখনকার চল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
আপনাকে এই চিন্তায় থাকতে হবেনা যে আপনার সঙ্গীর কোনো অযাচিত দিক হঠাৎ সামনে আসবে । আপনি তার মেজাজ, তার পছন্দ এবং অপছন্দগুলির সম্পর্কে সচেতন এবং সেই অনুযায়ী জিনিসগুলি এগিয়ে নিতে পারেন । তার ক্ষেত্রেও আপনার জন্য একই জিনিসগুলো প্রযোজ্য । আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত এবং দৃষ্টিভঙ্গি একই ধরণের এবং নিজের মনের কথা বুঝতে বা আপনি কোন জিনিস নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন তা বোঝাতে বেগ পেতে হয়না । আপনার শশুড়-শাশুড়ির ক্ষেত্রেও বলা যা যে আপনি যেহেতু আগে থেকেই তাদেরকে কিছুটা চেনেন এবং তারাও আপনাকে চিনে, তাই তাদের সাথে শুরু থেকেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ থাকে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা আমার কাছে মনে হয়, তা হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব । এগুলো ঠিক থাকলে যেকোনো সম্পর্ক অমর হবে ।
এখানে পুরো সিদ্ধান্ত আপনার । তাই আপনার সঙ্গীর সাথে বোঝাপড়ায় কোনো গরমিল হলে তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণই আপনার । পরিবারের কাছে অনেকেই তখন সহযোগিতা পান না । এক্ষেত্রে সমস্যাগুলো দেখা দেয় বিয়ের আগে সঙ্গীর ব্যাপারে অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে ।
লাভ ম্যারেজ বা এরেঞ্জড ম্যারেজ কোনটি ভালো তা নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন । আপনি মন থেকে যা চান সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যদি মনে করেন আপনার পছন্দ আপনাকে সুখী রাখবে তবে নিজের মনে কোনো অনুশোচনা না রেখে আপনার এই করা উচিত যাতে আপনি খুশি থাকবেন । অবশ্যই, আমাদের মা-বাবার খুশিও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে আপনি যা চান, আপনার খুশি যেটাতে, তা তাদেরকে বোঝান । তারা নিশ্চই আপনার জন্য ভালোটাই চাইবেন ।